ভোলাগঞ্জ

ভোলাগঞ্জ । Volaganj

ভোলাগঞ্জ । Volaganj

প্রথমেই বলে নেই ভোলাগঞ্জ (Volaganj) হচ্ছে সিলেট জেলার মধ্যে অবস্থিত। একেবারে ভারতের বর্ডার এর কাছাকাছি কোম্পানীগঞ্জ থানায়, এই সুন্দর মনোরম পাথর কোয়ারী অঞ্চল হচ্ছে ভোলাগঞ্জ। ভোলাগঞ্জ সীমান্ত দেখতে এমনিতেই সুন্দর তার ওপর ভারতের সীমানা মেঘালয়ের উঁচু উঁচু সুন্দর পাহাড় দেখে আপনি আরো মুগ্ধ হয়ে যাবেন। সাদা দুধের মত ঝর্ণা পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে বইছে, আসলে না দেখে আপনার এর সৌন্দর্য বুঝানো যাবে না। নীল আকাশে সাদা মেঘ সবুজ পাহাড়ের কাছাকাছি দিয়ে বয়ে ভেসে যাচ্ছে। এক অপরূপ দৃশ্য, এইদৃশ্য ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। 

সাদা পাথর নামে পরিচিত ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট । অনেকটি বদ্বীপ এর মত সাদা পাথরের এই জায়গাটি দেখতে। ভারত থেকে ধলাই নদীর পানির সাথে সুন্দর সুন্দর বড় বড় পাথর চলে আসে বাংলাদেশের ভিতরে। এখান থেকে পাথর উত্তোলন করে আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়। এই পাথর উত্তোলন করে ওখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। সাদাপাথর গুলির নৌকায় বহন করে নিয়ে আসছে ১০ নং ঘাট থেকে, সে দৃশ্য চোখে পড়বে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। যারা ফটোগ্রাফী তারা যদি ছবি তোলে, ছবি হবে প্রাণবন্ত।

ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন আছে ভোলাগঞ্জ সীমান্তের মধ্যে। মূলত চুনাপাথর ইমপোর্ট করা হয় এই স্টেশন থেকে। এখানে দুইটি স্থান আছে খুব সুন্দর, নাম হচ্ছে তুরংছড়া ও উৎমাছড়া। বর্ষাকালে এদুটি জায়গা একটু বিপদজনক থাকে তাই বর্ষার সময় এদিকে না যাওয়াই ভালো।

ঘুরে আসুন গজনী। বিস্তারিত জানতে এখানেক্লিক করুন

যাওয়ার সঠিক সময়

সিলেটের ভোলাগঞ্জে আপনি যদি সর্বোচ্চ সুন্দর দৃশ্য দেখতে চান তাহলে অবশ্যই বর্ষাকালের শেষের দিকে বা তার পরবর্তী সময় যেতে পারেন যেমন জুন জুলাই মাস থেকে নভেম্বর ডিসেম্বরের মধ্যে। এছাড়া যদি অন্য সময় জান তাহলে সুন্দর সুন্দর পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পাবেন কিন্তু নদীতে যে পানি ভরপুর থাকে এটা দেখতে পাবেন না। কারণ শীতের সময় পানির পরিমাণ একটু কম থাকে। 

যাবেন যেভাবে

প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে হবে। সিলেটে আপনি বিভিন্নভাবে যেতে পারেন, ঢাকার ফকিরাপুল, মহাকালী, সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি যায় যেমন গ্রীনলাইন, এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, এনা পরিবহন এর প্রত্যেকটা পরিবহনের এসি, নন এসি সার্ভিস রয়েছে, ভাড়া নেবে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে আর এসিতে নেবে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। (সময়ের সাথে ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে) ৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে আপনাকে সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে। এই ৩৫ কিলোমিটার রাস্তার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো, আপনি বাসে যেতে পারেন, সিএনজিতে যেতে পারেন, লেগুনাতে যেতে পারেন কিংবা টাকা একটু বেশি থাকলে প্রাইভেটকার রিজার্ভ করে যেতে পারেন। 

আবার ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো, কমলাপুর স্টেশন কিম্বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ভালো ভালো ট্রেন সিলেটে যায়, ট্রেন গুলোর নাম হচ্ছে জয়ন্তিকা, উপবন, পারাবত কিংবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে। আপনি এর মধ্যে যেকোনো একটি ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে পারবেন। ট্রেনের যোগাযোগ সপ্তাহে ১ দিন বন্ধ থাকে ৬ দিন চলাচল করে। 

এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে ডাইরেক্ট সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ আছে। আপনি উদয়ন এক্সপ্রেস কিংবা পাহাড়িকা এ দুটি ট্রেনএ সপ্তাহে ছয়দিন সিলেটে যেতে পারবেন।

সেন্টমার্টিন কে জানুন। বিস্তারিত জানতে এখানেক্লিক করুন।

এখন বলি সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ কীভাবে যাবেন এবং কত টাকা লাগতে পারে।  ভোলাগঞ্জ যেতে বিআরটিসি ও লোকাল টুরিস্ট বাস আছে। সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২০ মিনিট পরপর যাওয়া আসা করে, ভাড়া নেবে ১০০ টাকা মাত্র। সিএনজি ভাড়া নিবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ কোলে নিবে বারোশো টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। সিএনজিতে পাঁচ জন যেতে পারবেন। ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর নামের জায়গায় যেতে হলে আপনাকে নৌকায় করে যেতে হবে নৌকা ভাড়া নিবে ১০০০ থেকে বারোশো টাকার মতো । এক নৌকায় ৮ থেকে ১০ জন যেতে পারে।  তবে যাওয়ার আগে নৌকা ওয়ালার কাছে দাম দর করে নেওয়াই ভালো। 

তুরংছড়া ও উৎমাছড়া

তুরংছড়া ও উৎমাছড়া দুটি পর্যটন কেন্দ্র খুবই সুন্দর এটি ভোলাগঞ্জের কাছে অবস্থিত । অনেকেই এই দুইটি জায়গায় ঘুরতে যায় সাদা পাথর ভ্রমণ করার পরে। প্রথমে দায়রা বাজার যেতে হবে আপনাকে সাদা পাথর থেকে  তুরংছড়া ও উৎমাছড়া যেতে।  একই নৌকা আপনাকে নিয়ে যাবে তুরংছড়া ও উৎমাছড়া তবে ভাড়া একটু বেশি নেবে তাদের সাথে কথা বলে নিবেন।

এছাড়া আপনি মোটরসাইকেল বা সিএনজি তে যেতে পারেন সিএনজি ও মোটরসাইকেলে যেতে আপনাকে জনপ্রতি ভাড়া গুণতে হবে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত । আপনাকে নেমে দিবে চড়ার বাজার নামে একটি জায়গায়। ওখানে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে, একটু হেঁটে গেলেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত উৎমাছড়া পয়েন্ট আর একটু হেঁটে গেলে পাবেন তুরংছড়া পয়েন্ট। 

খাওয়া-দাওয়া করবেন যেখানে

ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর গেট কিংবা সাদা পাথরের তেমন কোনো ভালো হোটেল পাবেন না। ভাত ও মাছ খেতে গেলে ওখানে সাধারন মানের কিছু হোটেল আছে আর কোম্পানীগঞ্জ থানা কিছু ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট আছে যেমন আলম হোটেল, দেশবন্ধু হোটেল, নবীন রেস্তোরাঁ ,মায়া হোটেল, আরো কিছু ছোট বড় হোটেল আপনারা পাবেন সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়, তবে রাতে এসে থাকার সময় এখানে খেয়ে থাকতে পারবেন আর যদি দুপুরে খেতে চান তাহলে ওখানে যে ছোট ছোট হোটেল আছে, খাবার মান খুব একটা ভালো না তারপরেও খেয়ে নিতে হবে।

থাকবেন যেখানে

কোম্পানীগঞ্জ বা ভোলাগঞ্জে থাকার মত হোটেল নেই খুব একটা। যদি ইমারজেন্সি থাকতে হয় তাহলে আপনাকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় এসে থাকতে হবে। কোম্পানীগঞ্জে কিছু ছোট ছোট হোটেল আছে, সেগুলো হচ্ছে হালিমা বোডিং, আল সাদিক, বাদশা হোটেল, আল হাসান হোটেল, এই সমস্ত হোটেলে থাকতে পারবেন, এসি, নন এসি দুই ধরনের রুম আছে এছাড়াও ডাকবাংলো তে থাকতে পারবেন।

তবে সিলেট থেকে সকালে রওনা দিলে ভোলাগঞ্জে আবার বিকেলে ভ্রমণ করে আসতে পারবেন তাই আমার সাজেস্ট যে আপনারা ভোরবেলা রওনা দিয়ে রাতে থাকতে চাইলে সিলেট শহরে এসে থাকবেন সিলেট শহরের দরগা রোড লালবাগ এলাকায় সুন্দর সুন্দর কম ভাড়ায় ভালো মানের হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট ভাড়া নেবে 500 থেকে হাজার টাকার মধ্যে হোটেল গুলোর নাম হচ্ছে গুলশান হোটেল হিলটাউন সুরমা কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন সামর্থ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

যে সতর্কতাগুলো অবলম্বন করবেন

সকাল সকাল রওনা দিয়ে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসার চেষ্টা করবেন

নৌকায় ভ্রমণ করতে চাইলে সব সময় তাদের সাথে ভাড়া এবং সময় ঠিক করে নেবেন না হলে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হতে পারে

একটা জিনিস স্মরণ রাখবেন নৌকা ভ্রমন শুধুমাত্র বর্ষাকালেই করা যায় অন্য সময়ে নৌকা ভ্রমণ করা যায় না

সাঁতার যদি না জানেন তাহলে পানিতে না নামায় ভালো তার কারণ বর্ষাকালে প্রচুর পানি এবং স্রোত থাকে

এখানে একা একা না ভ্রমণ করে আট থেকে দশজন মিলে ভ্রমণ করলে টাকা সাশ্রয় হবে আর একা একা ভ্রমণ করলে খরচটা অনেকগুণ বেড়ে যাবে।

পৃথিবী ডট কম আপনাদের সব সময় সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে তার পরেও যদি আমাদের দেয়া তথ্য কোথাও ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের নিকট আমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ সঠিক তথ্যটি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা পরিবর্তন করে ফেলবো

যেহেতু এই ভ্রমণ স্পট গুলি আমাদের দেশের সম্পদ তাই এই ভ্রমণ স্পট এ বেড়াতে গেলে ওখানকার নিয়ম কানুন মেনে চলুন কোন কিছু ক্ষতি এবং ধ্বংসযজ্ঞ কাজ যেন আপনাদের দ্বারা না হয়। 

আরেকটি কথা- আমাদের দেয়া তথ্য বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া থাকার জন্য যে ভাড়ার রেড আমরা দিয়েছি তা যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে তবে আশেপাশেই থাকার সম্ভাবনা আছে।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published.