Jaflong

জাফলং Jaflong

জাফলং Jaflong

জাফলং (Jaflong) বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জয়গার মধ্যে একটি। প্রকৃতির কন্যা বলে থাকে সবাই এই জাফলং কে। সিলেটে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে তার মধ্যে জাফলং সবচেয়ে সুন্দর দেখতে এবং তাই সবাই এই জাফলংকে পছন্দ করে। ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা দিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় প্রকৃতির সৌন্দর্য সাজে আছে জাফলং, ঝুলন্ত ব্রিজ, সুন্দর সুন্দর উঁচু-উঁচু সাদা পাহাড়, সাদা মেঘের খেলা, পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা এগুলো সব মিলিয়ে জাফলংকে করে তুলেছে অতুলনীয় এবং অনন্য। এই জাফলং এর সৌন্দর্য মানুষকে সারা বছরই আগ্রহী করে রাখে কারণ প্রত্যেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রূপের প্রকাশ ঘটায়। চলুন জেনে নেই জাফলং সম্পর্কে বিস্তারিত ঘটনা যা পড়লে আপনি নিজেই জাফলং সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবে এবং ভ্রমণ করতে পারবেন।

কিভাবে জাফলং যাবেন

সিলেটের কথা মনে হলে মনে হয় চায়ের কথা। চায়ের বাগান আর জাফলংকে দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সেই চায়ের দেশ সিলেট। দেশের সব জায়গা থেকে মানুষ এই জাফলং এর সৌন্দর্য দেখতে আসে। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং প্লেনে যে কোন পথে সিলেটে আসতে পারবেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ঢাকা থেকে সিলেট যেভাবে যাবেন

ঢাকা গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, ফকিরাপুল এর যে কোন বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বিভিন্ন ধরনের বাস পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পরিবহন গুলো হচ্ছে সাউদিয়া পরিবহন, গ্রীনলাইন, এস আলম সার্ভিস, ইউনিক পরিবহন, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ, এনা, লন্ডন এক্সপ্রেস এগুলো উন্নত মানের এবং এসি বাস ভাড়া নেবে এক হাজার থেকে বারোশো টাকার মধ্যে আর নন এসি বাসে ভাড়া নেবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ঢাকা-সিলেটের মাঝের দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার।  সময় লাগে  স্থলপথে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মত।

আর যদি ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চান তাহলে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে জয়ন্তিকা, পারাবত, উপবন অথবা কলনী এক্সপ্রেস এই চারটি ট্রেন ছেড়ে যায়। বিভিন্ন শ্রেণীর সিট আছে এখানে। তবে সাধারণত ২৮০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যেই ট্রেন ভাড়া। সময় লাগে রেলপথের প্রায় আট ঘণ্টা।

আর যদি আকাশ পথে যেতে চান তাহলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান পথে নভোএয়ার ও ইউ এস বাংলা এয়ার বিমান এ যেতে আপনার ভাড়া গুনতে হবে ২৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে ।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাবেন যেভাবে

চট্টগ্রাম থেকে অনেক পরিবহন আছে, আপনি সহজেই যেতে পারবেন, ভালো মানের বাসের মধ্যে এনা পরিবহন, গ্রীনলাইন, সাউদিয়া, লন্ডন এক্সপ্রেস সহ আরো অনেক বাস চিটাগাং থেকে ডাইরেক্ট সিলেট যায়। এসি বাসের ভাড়া নেবে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। আর নন এসি বাসের ভাড়া গুনতে হবে আপনাকে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। রেলপথেও যেতে পারবেন, চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে নিয়মিত। শ্রেণি অনুযায়ী ট্রেনের টিকিট দেয়া হয়। সর্বনিম্ন ৩৭৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ টিকেট ১১০০ টাকা এর মধ্যে। এছাড়াও বিমান পথে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে যাওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। আপনি চাইলে আকাশপথে চিটাগাং থেকে সিলেট যেতে পারবেন।

সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার উপায়।

মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব সিলেট থেকে জাফলং। সিলেট থেকে জাফলং যেতে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন সার্ভিস আছে যেমন বাস, সিএনজি, লেগুনা, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ভাবে আপনি জাফলং যেতে পারবেন। জাফলং এর বাস সাধারণত সিলেট কদমতলী থেকে ছাড়ে মাত্র ৭০ টাকা ভাড়া নিবে যদি আপনি লোকাল বাসে জান। আর যদি গেটলক বিরতিহীন বাসে যেতে চান তাহলে ভাড়া একটু বেশি লাগবে ১০০ টাকার মতো, আবার আপনি যদি সিলেটের সোবহানীঘাট থেকে যেতে চান তাও যেতে পারবেন। বাস ছাড়া লেগুনাতে জাফলং যাওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে ।

আরো জানুন:- সাজেক ভ্যালি কিভাবে ভ্রমন করবেন বিস্তারিত।

এছাড়াও আপনি যদি গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে যেতে চান সে ব্যবস্থা রয়েছে। সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন, লেগুনা রিচার্জ নিতে পারবেন অথবা মাইক্রোবাসও রিজার্ভ দিতে পারবেন। এই পরিবহন গুলো রিচার্জ নিতে চাইলে সিলেট বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে থেকে নিতে হবে, তাছাড়াও সব জায়গা থেকে আপনি জাফলং যেতে পারবেন, লেগুনায় দশজন এবং সিএনজিতে পাঁচজন জায়গার হিসাব অনুযায়ী বসে আপনি যখন তখন যেতে পারবেন।

আপনি যদি নিজে সারাদিন একটা সিএনজি নিয়ে যেতে চান তাহলে বারোশত টাকা থেকে পনেরশত টাকা নিবে আর যদি আপনি লেগুনা নিতে চান তাহলে  দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা নেবে। আর মাইক্রো নিয়ে যেতে চাইলে আরেকটু বেশি লাগবে তিন হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। আপনারা যদি কয়েকজন মিলে যেতে চান তাহলে এভাবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আরেকটি জিনিস আপনাকে খেয়াল করতে হবে আপনি যে পরিবহনেই যাবেন- রিজার্ভ নেওয়ার আগে অবশ্যই আপনি কি কি দেখবেন তা দরদাম করে যাবেন, নইলে সমস্যায় পড়তে পারেন। পরিবার নিয়ে পিকনিকের উদ্দেশ্যে জাফলং ভ্রমণ করা খুবই মজাদার একটা ব্যাপার,  জাফলংএ যাওয়ার সব রাস্তায় বেশ ভালো তবে আপনি গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প জাফলং জিরো পয়েন্টে যাওয়ার রাস্তাটা খুব জনপ্রিয় এবং ভালো। আপনি এই পথে যেতে পারেন ।

জাফলং এ কোথায় থাকবেন।

সাধারণত ভ্রমণকারীদের জাফলংয়ে থাকার খুব একটা জায়গা নেই বললেই চলে। রাত যাপন করতে চাইলে আপনার সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেটে থাকলে আর একটা সুবিধা হয় তাহলো সিলেট থেকে আরও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন চা বাগান দেখতে যাওয়া যায়। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল শাহজালাল মাজারের আশেপাশেই অবস্থিত। দরগাহাট থেকে তালতলা আম্বর্খানা, কদমতলী, লামাবাজার, পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের আবাসিক হোটেল আছে এখানে, আপনি অনেক কম খরচে থাকতে পারবেন এবং বেশি টাকা দিয়েও থাকতে পারবেন আনুমানিক ধারণা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে ।

আরো জানুন:- কক্সবাজার কিভাবে ভ্রমণ করবেন বিস্তারিত।

আবার যদি ভালো হোটেলের মধ্যে বলি সেগুলো হচ্ছে হলি ইন, লাভ স্টার হোটেল, পানসি ইন হোটেল, মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল, হোলী গীত, আরো বিভিন্ন ধরনের ভালো ভালো হোটেল আছে যা আপনি দুই হাজার থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন। আর আরো ভালো মানে হোটেলে যদি আপনি থাকতে চান তাহলে হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নির্ভানা ইন, নাজিমগড় রিসোর্ট আরো বিভিন্ন ধরনের উল্লেখযোগ্য, প্রতি রাত্রি যাপন করতে আপনার খরচ হবে আট হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে।

আর যদি মনে করেন যে জাফলংয়ে রাত্রি যাপন করব কোথাও যাব না, তাহলে ওখানে কিছু হোটেল আছে নাম হচ্ছে জাফলং ইন হোটেল, হোটেল প্যারিস, এছাড়াও কিছু রেস্টহাউজ আছে সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ভিউ সহজে যোগাযোগ করতে পারেন আর সরকারি রেস্ট হাউসে থাকতে চাইলে আপনার আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে ওখানে সরকারী রেস্ট হাউসও আছে।

জাফলং এ খাওয়া-দাওয়া করবেন যেভাবে

বেশ কিছু জায়গায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে তার মধ্যে সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্ট, জাফলং পর্যটন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য এবং যদি আরো ভালো হোটেলে আপনি খেতে চান এখানে জিন্দাবাজার এলাকায় কিছু হোটেল আছে নাম হচ্ছে পানছি পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট সুলভ মূল্যে পছন্দমত সুন্দর সুন্দর খাবার এখানে পাবেন। এদের এখানে বিভিন্ন ধরনের খিচুড়ি, মাংস, ভর্তা আপনাকে রান্না করে খাওয়াবে। এখানে সকালে  নাস্তার ব্যবস্থা খুব সুন্দর আছে।৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে সুন্দর নাস্তা করতে পারবেন আর দুপুর, রাতে স্বাভাবিক ভাবে যদি খেতে চান  তাহলে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সুন্দর খাবার পাবেন।

 জাফলং এর আশেপাশে আরও কিছু সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় জায়গা সমূহ

তামাবিল খুব সুন্দর একটি জায়গা, তারপর আছে লালাখাল, তারপর জৈন্তাপুর, তারপর সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, মায়াবী ঝর্ণা, সংগ্রামপুঞ্জি চা বাগান, ডিবির হাওর, শাপলা বিল ,এগুলো সব জায়গায় খুব সুন্দর। আপনি এগুলা ভ্রমণ করে আপনার মনটাকে প্রফুল্ল বানাতে পারেন, অসাধারণ দেখতে এসমস্ত দৃশ্যগুলো।

জাফলং ভ্রমণ এর কিছু নিয়ম কানুন

১. যেটাই কিনুন, যেটাই খেতে চান না কেন অবশ্যই আগে তার দাম দর করে নিন, দামদর না করলেই ঝামেলায় পড়ে যাবেন।

২. কয়েকজন মিলে গেলে খরচটা কম হয়। আনন্দটাও বেশি হয়, ভালো লাগে, একা না গিয়ে কয়েকজন মিলে একটি গ্রুপ করে যেতে পারেন।

৩. যেহেতু জাফলং দেশের শেষপ্রান্ত অর্থাৎ সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত, সীমান্ত এলাকা যে সমস্ত নিয়ম কারণ আছে সেগুলো সব কিছু মেনে চলুন।

৪. যে কোন গাড়িতে উঠার আগে অবশ্যই দাম দর করে উঠুন।

৫. পানিতে নামার সময় অবশ্যই সাবধানে এবং সতর্কতার সহিত নামতে হবে। ওখানে সব সময় পাথর উত্তোলনের কাজ চলে তাই জায়গাটা বেশ গভীর।

৬. আমরা আপনাদের যথাশাদ্ধ গাইড করার চেষ্টা করেছি। কোন কারণেই আমাদের ওয়েবসাইট দায়ী থাকবে না।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published.