শিমুল বাগান Shimul Bagan
যাদুকাটা নদীর পাশেই মনিগাঁও নামে একটা গ্রাম আছে, ওই গ্রামেই শিমুল বাগান অবস্থিত। তার আগে বলে নেই শিমুল বাগান সুনামগঞ্জ জেলার শ্রীপুর থানার মধ্যে পড়ছে । ৩ হাজার শিমুল গাছ নিয়ে তৈরি এই শিমুল বাগান, জায়গার পরিমান কম না প্রায় ১০০ বিঘা অর্থাৎ ৩৩ একর জমি। জয়নাল আবেদীন নামে একজন মানুষ বাগানটি তৈরি করা শুরু করেন ২০০৩ সাল থেকে। এখন তিনি মোটামুটি ভালো একজন বড় ব্যবসায়ী, তার নাম জয়নাল আবেদীন শিমুল সেজন্য তার নামে অর্থাৎ শিমুল বাগান হিসেবে পরিচিত।
আরো পড়ুন- গজনী অবকাশ কেন্দ্র
বসন্তকালে এই শিমুল বাগান কি সুন্দর লাগে এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না আপনারা একটি চোখ বন্ধ করলেই বুঝতে পারবেন তাকালে মনে হয় লাল আগুনের সুন্দর একটা রশ্মি এসে চোখে লাগছে। এই গাছের পাপড়ি গুলো এত সুন্দর বসন্তকালে যখন ঝরে পড়ে লাল রক্তমাখা পাপড়ি দেখে মনটা রাঙিয়ে উঠে, মনটা ভালো হয়ে যায়। আমরা সবাই জানি সুনামগঞ্জ জেলা সীমান্তবর্তী এলাকায়। আর এই বাগানটি সীমান্তেই, মানে ভারতের মেঘালয় পর্বত গুলো আছে উচু পাহাড় সেগুলো তো মন মাতানো সুন্দর তারপর আবার শিমুল বাগান, সুন্দর্যের একাকার হয়ে যায়। আমরা সবাই জানি বসন্তকালে শিমুল গাছের সুন্দর সুন্দর ফুলের পাপড়ি পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে আমি যখন এই বাগানের মাঝখান দিয়ে হাঁটবেন তখন মনে হবে আপনার পায়ের নিচে সুন্দর লাল গালিচা বিছানো আছে আপনি আনন্দ এবং খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবেন এই বাগানের সৌন্দর্য দেখলে।
শিমুল বাগানের যাওয়ার সঠিক সময়
শিমুল বাগানের ভ্রমণের জন্য আপনি বছরের যেকোনো সময় যেতে পারেন তবে শিমুল বাগানের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য যদি আপনি দেখতে চান তাহলে ফাল্গুন মাসের শুরুতে যেতে হবে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে যদি আপনি যান তাহলে তার সর্বোচ্চ মনে বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
তাছাড়া আপনি যদি বর্ষাকালে যেতে চান তাহলেও সুন্দর লাগবে, তবে ফুল দেখতে পাবেন না, সবুজ শিমুল বাগান দেখতে পাবেন, তাছাড়া ওখানে আরেকটি হাওড়া আছে নাম টাঙ্গুয়ার, এটা তখন পানি দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে শিমুল বাগানের পাশাপাশি আপনি নৌকা ভাড়া করে সুন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর মেঘালায় পাহারের সৌন্দর্য তো আছেই।
আরো পড়ুন- ভোলাগঞ্জ, সাদা পাথর
যেভাবে যাবেন শিমুল বাগান
আমরা প্রথমেই আলোচনা করেছি যে শিমুল বাগান সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। তাহলে শিমুল বাগানের যেতে গেলে সুনামগঞ্জ সদরে আসতে হবে। এখন আপনাকে বলি ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ আসতে হলে মহাখালি বাস ইস্টান থেকে আসতে পারেন আবার গাবতলী সায়েদাবাদ ফকিরাপুল এসমস্ত বাস স্ট্যান্ড থেকে আসতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের বাস রয়েছে, এসি নন এসি, যেমন শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এই সমস্ত বাসগুলো সুনামগঞ্জ নিয়মিত যাওয়া আসা করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হবে। সময় লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা। তবে সময়ের পরিবর্তনে ভাড়া কম বেশি হতে পারে।
এখন বলি সুনামগঞ্জ থেকে শিমুল বাগান কিভাবে ভ্রমণ করবেন। শিমুল বাগান যেতে হলে দুই দিক দিয়ে যেতে পারবেন তাহলো লাউড়েরগড় অথবা তাহিরপুর হয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। যাইতে লাগবে ২ ঘন্টা। সারাদিনের জন্য আপনি গাড়ি রিজার্ভ করতে পারেন। আবার মোটরসাইকেলে যেতে পারেন। তবে মোটরসাইকেলে আপনার সারাদিন ভাড়া নিবে তেরোশো থেকে ১৮০০ টাকা। আর সিএনজি রিজার্ভ করলে দুই হাজার থেকে ২৫০০ টাকা নেবে। খরচ বাঁচাতে চাইলে মোটরসাইকেল বা সিএনজিতে লাউড়েরগড় পর্যন্ত গিয়ে নৌকা দিয়ে পার হয়ে শিমুল বাগান যেতে পারবেন।
নেত্রকোনা থেকেও শিমুল বাগান খুব সুন্দর ভাবে যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকাল ছাড়া মোটরসাইকেলে করে যাওয়া খুব সুবিধা। নেত্রকোনা থেকে কলমাকান্দা পাঁচগাঁও বাজার। ওইখান থেকে আবার মহিষখোলা হয়ে টেকেরঘাট, টেকেরঘাট থেকে শিমুল বাগান যাওয়া যায়। আবার বর্ষার সময় মোহনগঞ্জ থেকে ধর্মপাশা হয়ে নৌকায় টাঙ্গুয়া হাওর যাওয়া যায়,পাশাপাশি শিমুল বাগান ঘুরে আসতে পারবেন।
হোটেল নূরানী,
পুরাতন বাস স্ট্যান্ড , সুনামগঞ্জ।
হোটেল খন্দকার
বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট, সুনামগঞ্জ।
হোটেল সারপিনিয়া
জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ।
হোটেল নীলাদ্রি
বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট, সুনামগঞ্জ।
হোটেল মিজান,
পূর্ব বাজার, সুনামগঞ্জ।
হোটেল আল মদিনা
বাদাঘাট বাজার, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ।
হোটেল প্যালেস,
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ।
হোটেল নূর
পূর্ব বাজার স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ।
সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট, সুনামগঞ্জ।
শিমুল বাগানে থাকার ব্যবস্থা
শিমুল বাগানের আশেপাশে তেমন কোনো ভালো হোটেল নেই থাকার মত। টেকেরঘাট নীলাদ্রি লেক এর কাছে ছোট ছোট কিছু হোটেল আছে, নাম হচ্ছে হোটেল নীলাদ্রি, খন্দকার হোটেল, মেঘালয় গেস্ট হাউস, অল্প কিছু থাকার মত হোটেল আছে । আপনার কাছ থেকে ৮০০ থেকে বারোশো টাকার মত নিতে পারে এক রুম। বাদাঘাট বাজার নামে শিমুল বাগানের পাশে একটি বাজার আছে, আল মদিনা হোটেল নামে একটি হোটেল আছে তুলনামূলকভাবে ভালোই মোটামুটি। এছাড়া সুনামগঞ্জ শহরে ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে সুন্দর সুন্দর হোটেলে থাকতে পারবেন। নিচে কিছু হোটেলের নাম ও ঠিকানা দিয়ে দিলাম আপনারা পছন্দমত থাকতে পারবেন।
শিমুল বাগানে খাবেন যেখানে
অনেক ছোট ছোট খাবার হোটেল বা দোকান আছে সেখানে। এগুলোতেই আপনি খাবার খেয়ে নিতে পারেন এছাড়া বারিক টিলা নিচে, লাভের বাজার, বাদাঘাট, বড়ছড়া বাজারে কিছু ছোট ছোট হোটেল আছে, খুব একটা ভালো খাবার হবে না, তারপরও আপনি আপনার চাহিদা মেটাতে পারবেন। বিভিন্ন রকম সবজি, মাছ, ভর্তা এগুলা পাবেন। খাবার ভালো মোটামুটি।
পৃথিবী ডট. কম আপনাদের সব সময় সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপরেও যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের হোম পেজে মোবাইল নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, সবকিছু দেওয়া আছে, আমরা সাথে সাথে পরিবর্তন করে নেব। আরেকটা জিনিস সবসময় ভাববেন, যে এই ভ্রমণ স্পট গুলো আমাদের সম্পদ এগুলোতে ভ্রমণ করতে গেলে নিজের সম্পদ মনে করে রক্ষা করবেন। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না, কোনও ক্ষতি করবেন না।
আমাদের এই আলোচনায় বিভিন্ন ভাড়ার কথা বলে থাকি, ভাড়া বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হতে পারে। আর আমরা যেহেতু অনেক দূরে ভ্রমণে যাই সেখানকার স্থানীয় লোক আমাদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ফন্দি করতে পারে, তাই অবশ্যই সবসময় সব জায়গায় দাম দর করে টাকা ঠিক করে ভ্রমণ করবেন। আপনার ভ্রমণ শান্তিপূর্ণ হোক এই কামনাই করি। ধন্যবাদ।