sreemongal

শ্রীমঙ্গল চা বাগান sreemangal

শ্রীমঙ্গল চা বাগান

আমরা সবাই জানি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে আমরা চায়ের রাজধানী বলে থাকি। প্রায় ৯২ টি চা বাগান আছে মৌলভীবাজার জেলায়।  প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণ করতে আসে এই শ্রীমঙ্গলের ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার ধরে এই চায়ের বাগানে। পাহাড়ের ঢালে এত সুন্দর গালিচা পাড়া চায়ের বাগান মাইলের পর মাইল বিস্তৃত। শ্রীমঙ্গলে সবচেয়ে উন্নত মানের চা উৎপন্ন করা হয়।

আরো পড়ুন- কাপ্তাই লেক ভ্রমণ গাইড বিস্তারিত।

শ্রীমঙ্গলে ঢুকেতে বা প্রবেশ করতেই সামনে বিশাল গেট পাবেন, সেই গেটটি দেখে আপনার মনটা ভরে যাবে। গেটটি  তৈরি করা হয়েছে জেলা প্রশাসক এর সহযোগিতায় আর সেখানে সাতগাঁও চা বাগানে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। এখানে কিছু সাদা রঙ্গের কাঠের তৈরি ছোট ছোট ঘর আছে সে ঘরে ইংরেজরা যখন শাসন করতো সে শাসনামলে চা আবাদ করার সময় এই ঘরে বসবাস করত।  শুধু তাই না এই চা বাগানে ঘুরলে ইংরেজরা যে এখানে শাসন করেছে তার অনেক প্রমান বা ছাপ লক্ষ্য করা যায়।

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের সঠিক সময়।

সাধারণত চা উত্তোলন করা হয় বছরে ছয় মাস। মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এ সময় চা বাগান সবুজে পরিপূর্ণ থাকে।  যারা চা পাতা তোলেন তারা সব সময় কর্মব্যস্ত থাকে। আপনি চাইলে এই ছয় মাসের মধ্যে আপনি শ্রীমঙ্গলে চা বাগান ভ্রমণ করে আসতে পারেন। তাছাড়াও সারাবছর ভ্রমণ করা যায়।

শ্রীমঙ্গলে কি কি দেখবেন

শ্রীমঙ্গলে সাধারণত মানুষ অপরূপ সুন্দর এই চা বাগান ভ্রমণ করতে আসে। তবে শ্রীমঙ্গলের উঁচু-নিচু টিলা চা বাগান দেখতে আরো সুন্দর লাগে, মনটাকে আরো সতেজ করে তোলে। এখানে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে।  আরেকটু ভিতরে গেলে ফিনালের চা বাগান দেখতে পাবেন।  বিটিআরআই এর নিজস্ব চা বাগান রয়েছে এখানে। জেরিন টি- স্টেট আরো সুন্দর, আরো বিশাল,  কয়েক কিলোমিটার সামনে যেতে হবে ভানু সড়ক ধরে তাহলেই পেয়ে যাবেন জেরিন টি স্টেট। নুরজাহান টি স্টেটে যেতে হলে আপনাকে লাউছাড়ার কিছুটা আগের ডানপাশে জঙ্গল ঘেরা পথ ধরে আপনাকে যেতে হবে। 

আরো পড়ুন- কিভাবে ভ্রমণ করবেন বিছানাকান্দি

চা বাগান ঘুরতে ঘুরতে আপনি ধলাই সীমান্ত দেখতে পাবেন।  এটা মাধবপুর লেক থেকে প্রধান সড়কের ডান দিকে রাস্তা ধরে যেতে হবে।  সীমান্ত পর্যন্ত যেতে যেতে দেখতে পাবেন দুই পাশে শুধু চা বাগান। এখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ আছে। সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ফাঁড়ির পাশে। নীলকণ্ঠের একটি শাখা রয়েছে বিজিপি দপ্তরের ধারে।

এখানে শুধু চা বাগান দেখা নয়। মৌলভীবাজার  যা দেখবেন সেটাই সুন্দর লাগবে তাই। এখানে ভ্রমণ করতে আসলে সবকিছু দেখে যাওয়াই ভালো।  আপনি পুরা চা বাগান ঘুরে দেখতে চাইলে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখে শেষ করতে পারবেন না । আপনাকে একটা জিপ গাড়ি ভাড়া করতে হবে, ভাড়া হিসেবে আপনার কাছ থেকে ৩০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা নিতে পারে। এছাড়া পাবেন সিএনজি, অটোরিকশা । তিনজন চারজন আরামে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে কি কি দেখতে চান তা আগে তাদের সাথে আলোচনা করুন এবং ভাড়া ঠিক করে নিন, সিএনজিতে ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা নিতে পারে।

শ্রীমঙ্গলে কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে আপনি দুইভাবে যেতে পারবেন ট্রেন পথ আছে এবং বাস পথ আছে। ট্রেন পথে যেতে চাইলে পারাবত এক্সপ্রেস, মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের ছয়দিন ভোর ছয়টা ৪০ মিনিটে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে রওনা দেয়।  আর প্রতিদিন দুপুর ১২ টায় কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, বিকাল তিনটার সময় ছেড়ে যায়। বুধবার বাদে সপ্তাহের সব দিন রাত দশটায় উপবন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পছন্দমতো সময়ে যেকোন একটি ট্রেনে আপনি শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

আর ঢাকা থেকে বাসে ভ্রমণ করতে চাইলে আপনি ঢাকার যেকোনো বাস স্ট্যান্ড থেকে শ্রীমঙ্গল এর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন। ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসি, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, এসি, নন এসি বাস সব সময় যাওয়া আসা করে। বাস ভাড়া আনুমানিক ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। নিজের প্রাইভেট গাড়ি বা  ভাড়া গাড়ি নিয়েও শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করতে পারে।

শ্রীমঙ্গলে কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য ভালো, মিডিয়াম এবং লাক্সারিয়াস, সব ধরনের কটেজ বা সরকারি-বেসরকারি হোটেল পাবেন। শ্রীমঙ্গল সদরপুরে বিভিন্ন ধরনের আবাসিক হোটেল পাবেন আপনি আপনার পছন্দমত হোটেলে থাকতে পারবেন। এখানে পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে নাম- গ্র্যান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট। প্রতিটি রিসোর্ট চা বাগান ঘেষা, আপনি নিচের বারান্দা থেকে খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। নিচে কিছু আবাসিক হোটেল রিসোর্ট এর নাম ও বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

নভেম ইকো রিসোর্ট : শ্রীমঙ্গলের রাধানগর জায়গায় অবস্থিত। এই রিসোর্ট এ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আপনি পাবেন। এখানে মাটির ঘর রয়েছে, কাঠের ঘর রয়েছে এবং তাবুতে থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে প্রতি রাতের ভাড়া বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। দুই থেকে আটজন থাকতে পারবেন। ভাড়া লাগতে পারে ৮০০০ থেকে ১৭৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নাম্বার:  01709  88000

টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম:  বাংলাদেশ চা বোর্ড অধিদপ্তরের অধীনে শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছা রোডে এই হোটেলটি অবস্থিত এখানে ৪  থেকে ৮ জন  থাকতে এক রুম ভাড়া নিতে পারে প্রতিরাতে। ভাড়া লাগবে ৫০০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বার  01749  014 306 

নিসর্গ লিচিবাড়ি কটেজ:  ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বার:  01766  557780

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট: প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া ৩০০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।  যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বার:  01763 555 000

শান্তিবাড়ি রিসোর্ট:  মোবাইল নাম্বার 01716 189 288

এই রিসোর্ট গুলির ভাড়া সারাবছর একরকম থাকে না।  ভ্রমণ টাইমে অর্থাৎ সিজন টাইমে ভাড়া একটু বেশি লাগে আর অন্য সময় ভাড়া কম লাগতে পারে। তবে প্রতিটি রিসোর্টএ, প্রতিটি যানবাহনে,  প্রতিটি জিনিস খাওয়ার আগে আপনারা অবশ্যই দাম দর করে নেবেন নইলে সমস্যায় পড়তে পারেন। 

প্রতিটি চা-বাগানে প্রবেশের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেবেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিবেন অনুমতি ছাড়া কখনই প্রবেশ করবেন না। 

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published.