গারো পাহাড়ের কোল ঘেষে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় গড়ে উঠেছে গজনী অবকাশ কেন্দ্র। ১৯৯৩ সালে প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। গজারী, সেগুন ও শাল গাছের সারি প্রশান্তি এনে দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে। একই সাথে পাহাড়, বন-জঙ্গল আর হ্রদের অপূর্ব সমাবেশ দেখতে পাবেন এখানে। বিশেষ করে শীতকালে ভ্রমণ পাগল মানুষ এখানে ছুটে আসেন গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। ঘন সবুজ বনের সাথে টিলা, লেক, পাহাড়ী ঝর্ণা ও ছড়ার স্বচ্ছ পানি এখানকার পরিবেশকে অন্যন্য বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয় করে তুলেছে।
গজনী অবকাশ কেন্দ্রের কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে এখানকার পাহাড়ী ঝর্ণার গতিপথে বাধ দিয়ে। লেকের মধ্যে ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে লেক ভিউ পেন্টাগন ও কৃত্রিম পাহাড়। পাহাড়ের চুড়ায় তৈরি করা হয়েছে একটি আধুনিক রেস্ট হাউজ। পাহাড়ের গা বেয়ে রেস্ট হাউজে যাওয়ার জন্য তৈরি করে দেয়া হয়েছে আকাবাকা সিঁড়িপথ, নাম পদ্মাসিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে পাবেন সান বাঁধানো বেদীসহ বট চত্বর।
এখানে যারা পিকনিক করতে আসবেন, তাদের জন্য রান্না করার ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানির নলকূপ। সেই সাথে আছে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, আর আছে খেলার মাঠ। যারা গাড়ি নিয়ে যাবেন, তাদের জন্য গাড়ি পার্কিং সুবিধা তো আছেই।
শেরপুর জেলা ব্রান্ডিং কর্নার আছে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে। শেরপুর জেলা ব্র্যান্ডিং এর জন্য তৈরিকৃত ব্র্যান্ডিং কর্নারে জেলার বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত বই, পত্রিকা, ছবি, ভিডিও চিত্র আছে, আর এর শ্লোগান হলো ‘পর্যটনের আনন্দে তুলসীমালার সুগন্ধে শেরপুর’। আরেকটি আলাদা নির্দিষ্ট স্থানে আছে জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলসীমালা চাল।
দেখার যা আছে গজনীতে
পাহাড়ি টিলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, পাতাল পথ, ক্যাকটাস পল্লী, রংধনু ব্রিজ, ক্রিসেন্ট লেক, প্যাডেল বোর্ড, পানসিতরী নৌকা, কৃত্রিম জলপ্রপাত, লাভ লেইন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিফলক, শিশু পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা, যেখানে প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী আছে এবং বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি আছে। এর সাথে ভ্রমণকারীরা দেখতে পাবেন গারো পাহাড়ের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা।
ঘুরে আসুন স্বপ্নপুরি বিস্তারিত জানতে- ক্লিক করুন।
গজনী অবকাশ কেন্দ্রের প্রবেশ মূল্য
অবকাশ কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা দিতে হবে। ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা খরচ হবে। উপজেলা পরিষদ চেকপোস্ট থেকে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার জন্য গেটপাস নিতে হবে। এজন্য বাস ও ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপের জন্য ১৫০ টাকা, জিপ, প্রাইভেট কারের জন্য ১০০ টাকা এবং সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটর সাইকেলের জন্য ৫০ টাকা দিতে হবে। সীমান্তে বিজিবির নকশী ক্যাম্পে এই গেটপাস দেখাতে হয়, তাই গেটপাসটি সংরক্ষণ করতে হবে যতক্ষণ ভ্রমণকারী গজনীতে অবস্থান করবেন।
গজনীতে যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ২২০ কি.মি. আর সড়ক পথে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। গজনী অবকাশ কেন্দ্রের সবচেয়ে সুবিধাজনক রুট হলো ঢাকার মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর যাওয়া। ঢাকা-শেরপুর নন এসি বাসের ভাড়া পড়বে জন প্রতি ৬০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া পড়বে জন প্রতি ৮০০ টাকা।
শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে অটোরিক্সায় করে খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর যেতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০টাকা। শাপলা চত্বর থেকে গজনী ও মধুটিলা ইকোপার্ক যাওয়ার জন্য পাবেন রিজার্ভ সিএনজি অটোরিক্সা। রিজার্ভ ভাড়া পড়বে গাড়ি প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
যদি মাইক্রোবাসে করে শেরপুর থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে চান, তারা ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা খচর করে রিজার্ভে যেতে পারবেন। এছাড়া লোকালবাসে শেরপুর থেকে ঝিনাইগাতীেএসে আবার সেখান থেকে বাস বা সিএনজি অটোরিক্সায় খুব সহজেই যেতে পারবেন। আর উত্তরবঙ্গ থেকে যেতে হলে সড়ক ও রেলপথে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়ে শেরপুর যেতে পারবেন। শেরপুর থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্র মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে।
মনে রাখবেন, এখানে দেয়া ভাড়া যে কোনো সময় যে কোনো কারণে বৃদ্ধি হতে পারে।
ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল বিস্তারিত জানতে– ক্লিক করুন।
থাকতে যদি চান
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি নিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউজে থাকতে পারেন। এছাড়া শেরপুরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও গেস্ট হাউজে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে রাত্রীযাপন করতে পারেন। এর মধ্যে কাকলী, সম্পদ, ভবানী প্লাজা, বর্ণালী গেষ্ট হাউজ উল্লেখযোগ্য। শেরপুর সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলইডি, এটিআই এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন। এছাড়া গজনী অবকাশ কেন্দ্রের নিজস্ব রেস্ট হাউজে থাকতে চাইলে সময় ও কক্ষ ভেদে ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
ফোন নাম্বারঃ
সার্কিট হাউজ – ০৯৩১-৬১২৪৫,
হোটেল সম্পদ – ০১৭১২৪২২১৪৫,
কাকলী গেষ্ট হাউজ – ০১৯১৪৮৫৪৪৫০,
হোটেল সাইদ – ০৯৩১-৬১৭৭৬।
খাবেন কোথায়
খাওয়ার জন্য শেরপুর অথবা ঝিনাইগাতীতে চলে আসাই ভাল। বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল পাবেন, পছন্দমত খাবার খেতে পারবেন। অবশ্য এখন গজনীতেই বেশ ভাল মানের ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবারের হোটেল গড়ে উঠেছে। এখানে পাবেন ভাত, মুরগি ও গরুর মাংস, ছোট মাছসহ দেশীয় প্রায় সব ধরনের ভর্তা। শেরপুর গেলে এই অঞ্চলের বিখ্যাত খাবার দুধের ছানা আর ছানার পায়েস অবশ্যই খেয়ে আসবেন।
বিশেষ পরামর্শ
গজনী ভারতীয় সীমান্ত খুব কাছেই, তাই কৌতুহলের বশে কেউ সীমান্তের দিকে যাবেন না। কোনো জরুরি প্রয়োজন হলে শেরপুর জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় ফোন করতে পারেন, ফোন নাম্বারঃ ০৯৩১-৬১৯০০, ০৯৩১-৬১২৮৩, ০৯৩১-৬১৯৫৪